করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে বিশ্বের নানা দেশ কাজ করে যাচ্ছে। শতাধিক ভ্যাকসিন বর্তমানে পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যেই রাশিয়া দাবি করেছে, তাঁরা সর্বপ্রথম করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। রাশিয়ার তৈরি করোনার টিকা তৈরিতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের নৈতিকতার ‘গুরুতর লঙ্ঘনের’ অভিযোগ এনে ইতিমধ্যে দেশটির এক শীর্ষ চিকিৎসা কর্মকর্তা পদত্যাগও করেছেন। এসব কারণসহ আরও নানা কারণে বিশ্বের অসংখ্য মানুষ করোনার ভ্যাকসিনের ওপর আস্থা পাচ্ছেন না। তাই বাজারে আসলেও এই ভ্যাকসিন নিতে রাজি নন অনেকে। ১৫ আগস্ট সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে এমন কথাই বলা হয়েছে।
ফ্লোরিডার ৫৭ বছর বয়সী সাবেক নার্স সুজান বেইলি প্রতি বছর ফ্লুতে আক্রান্ত হন। তবুও তিনি করোনার ভ্যাকসিন নিতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘আমি ভ্যাকসিনের বিরোধী নই। আমার শরীরের অবস্থাও খুব একটা ভালো না। তারপরও আমি অনেক দিন পর্যন্ত দেখতে চাই, এই ভ্যাকসিনের কী কী ক্ষতিকর দিক থাকতে পারে।’
সুজান বলেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিশ্বাস করেন না। বিশ্বের সেরা বিজ্ঞানীরা মাত্র ছয় মাসেই করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করে তা নিতে বলবে, তা হয় না। এটা অনেক তড়িঘড়ি মনে হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অন্তত ১৮ মাস সময় নেওয়া উচিত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আমেরিকার শুধু সুজান বেইলি নন, সারা বিশ্বে অসংখ্য মানুষ করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে এখন এমন সন্দেহ পোষণ করছেন। তাঁরা এত তড়িঘড়ি তৈরি করা ভ্যাকসিন নিতে নারাজ।
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ নিল জনসন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের সংশয় পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বলেন, করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের মধ্যে চার ধরনের সংশয় রয়েছে। এগুলো হলো—নিরাপদ কিনা; আসলে ভ্যাকসিনের দরকার আছে কিনা, থাকলে কখন; ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রতি আস্থা এবং অনিশ্চয়তা। তিনি আরও বলেন, ‘আপনি যদি ১০ জনকে জিজ্ঞাসা করেন করোনার ভ্যাকসিন নেবেন কিনা, আর ১০ জনই যদি রাজি থাকেন—তাহলে আমি বিস্মিত হব।’
বিজ্ঞানীরা বলছেন, সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ভ্যাকসিনের কোনো বিকল্প নেই। এই ভ্যাকসিনই প্রতি বছর ৬০ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করছে। আমেরিকার সংক্রামক রোগবিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফাউসি বলেছেন, একমাত্র ভ্যাকসিনই এই করোনা মহামারি ঠেকাতে পারে। এ ছাড়া ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একমাত্র ভ্যাকসিনই পারে এই লকডাউন ব্যবস্থার অবসান ঘটাতে।