ঘটনা ১৯৮৬ সালের। তখন আমি ঢাকা আলীয়া মাদ্রসায় পড়ি। সেই সময় ছুটির দিনে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখতাম। ঢাকায় তখন এতো রিক্সা গাড়ি ছিলো না। মানুষের এতো সমাগম ছিলো না। রাস্তায় কোনো প্রকার জানযট ছিলো না। যেখানে ইচ্ছে সেখানেই হেঁটে যাওয়া যেতো। ঢাকার সদর ঘাট থেকে মিরপুর দশ নম্বর পর্য্যন্ত সব অলিগলি আমি পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখেছি। সেটা এখনকার সময়ে হয়তো সম্ভব নয়। আলীয়া মাদ্রাসায় পড়াকালীন বিভিন্ন এলাকায় হেঁটে গিয়ে টিউশনি করতাম। সেই সময়ে বড়ই আজব খেয়াল ছিলো আমার। টিউশনি থেকে ফিরে কোনো কোনোদিন রাত বারোটা-একটা পর্য্যন্ত রমনা পার্কের বকুল গাছে কিংবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চম্পা ফুল গাছে উঠে বসে থাকতাম। কী অদ্ভূত সেই চম্পা ফুলের ঘ্রাণ! মনে হয় চম্পা ফুলের মধুর সেই ঘ্রাণ এখনো আমার নাকে লেগে আছে। রাতের পার্কের কতো হাস্যকর ঘটনার স্মৃতি জমা মুসাফির-এর মনের মাঝে।
ছুটির দিনে ঢাকা শহর ঘুরতে ঘুরতে একদিন হাইকোর্টের মাজার দেখতে গেলাম। গিয়ে দেখলাম অনেক পুরুষ ও মহিলা মাজারে সিজদা করছে এবং তাদের যার যার মনের বাসনা পূরণের কথা মাজারের কাছে জোরে জোরে বলছে। শুনলাম এক দম্পত্তি বলতেছে, বাবা আমাদের বাচ্চা নাই, আমাদের বাচ্চা দাও। (নাওজুবিল্লাহ)। আল্লাহ ছাড়া কারো কি এই বাচ্চা দেয়ার ক্ষমতা আছে? মাজারের মৃত লোক কী করে মানুষের মনের আশা পূরণ করবে? এইসব ফালতু কারবার দেখে সেই যে ঐ মাজার থেকে আসলাম আর কোনোদিন ওখানে যাইনি। যদিও ঢাকাতে গেলে ওর আশপাশ দিয়েইে আসা যাওয়া করতে হয়।
মিরপুর শাহ আলীর মাজার! সেতো আরো বিশাল ভন্ডদের কারখানা। শাহ আলীর মাজার নিয়ে বেশি কিছু আর লিখলাম না। হাইকোর্ট ও শাহ আলী এই দু’টো মাজারে বর্তমান শিরকি ও বিদায়াতি কার্য্যক্রম আপনারা নিজ চোখে দেখে নিবেন। ঢাকার হাইকোর্টের মাজার ও মিরপুরের শাহ আলীর মাজারে যারা শায়িত আছেন, অনেকেই হয়তো তাদের নাম জানেন না। আপনাদের অবগতির জন্য বলছি যে, ঢাকার হাইকোর্টের মাজার হলো- খাজা শরফুদ্দীন চিশতি (রহ.) এর এবং মিরপুরের শাহ আলীর মাজার হলো- হযরত শাহ আলী বোগদাদি (রহ.) এর। এরা দু’জনই ওলিয়ে কামেল। কিন্তু তাঁদের মাজারগুলোও এখন ভন্ডদের দখলে।
সুপ্রিয় বন্ধুরা! আমরা আমাদের যেকোনো সমস্যা ও প্রয়োজনের কথা মাজারে না বলে সরাসরি আল্লাহর কাছে বলি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাজারের শিরক ও বিদায়াতি কার্য্যকলাপ থেকে মুক্ত রাখুন। আমীন। (চলবে . . .)