কথায় আছে ‘মেয়েদের মন নাকি ঈশ্বর ও বুঝতে পারেন না’। মেয়েরা কখন কি চায়, কাকে চায় তা অন্যকেউ বুঝতে পারে না।ধরুন, ছেলেটি বেশ ভালো, পড়াশোনা, স্বভাব– সবেতেই। কিন্তু কোথায় যেন একটা ‘কমতি’ রয়েছে, তাই তো কোনও মেয়েই তাকে প্রেমিক হিসেবে মেনে নিতে চায় না বা কোনও প্রেমিকাই তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে বেশিদিন স্থির থাকে না। সবার চোখেই ওই সিধেসাধা ছেলেটি মায়ের আঁচলে থাকা লক্ষ্মী ছেলে হয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু কেন হয় এমন? কারণগুলো আসুন জেনে নিই-
১. গায়ে পড়া স্বভাব নেই:গায়ে পড়ে বন্ধুত্ব করা বা গায়ে পড়ে থাকা এদের স্বভাব নয়। শুধু মেয়ে কেন, কারও গায়ে পড়ে আলাপ করাটা এদের না-পছন্দ। এমনকি কেউ আলাপ করতে এলেও নিজের মধ্যেই গুটিয়ে থাকেন। ফলে তাদের পরিচিত মানুষের পরিধি খুবই ছোট আর সেই পরিধিতে মেয়েদের সংখ্যা আরও কম।
২. এরা কাউকে প্রতারিত করতে পারেন না:
কোনও মেয়েকে নিজের প্রেমে ফেলতে গেলে একটু কৌশল, একটু ছলাকলা জানতেই হয়। বলাই বাহুল্য যে, ভালো ছেলেরা এসব থেকে একশ হাত দূরে থাকেন এবং এগুলো বোঝেন না। প্রেমের সপ্ত ছলকলা এদের রপ্তের বাইরেই থেকে যায়।
৩. ভালো ছেলেরা ‘বোরিং’ হয়:
ভালো ছেলেরা কোন মুহূর্তে কী কাজ করবে, তা সহজেই ধারণা করা যায়। কিন্তু খারাপ ছেলেদের ক্ষেত্রে এ কথা খাটে না। এই বিগড়ে যাওয়া ছেলেদের প্রেমিকা হওয়া মেয়েদের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
আবার বিগড়ে যাওয়া ছেলেদের শুধরাতে মেয়েরা ভালোবাসে। ওই ছেলেটিকে নিজের মতো করে তৈরি করাই মেয়েদের মিশন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ভালো ছেলের মধ্যে ঠিক ঠাক করার কিছুই নেই। তাই তাদের না-পসন্দ করেন মেয়েরা।
৪. মায়ের কথা মেনে চলে:
ভালো ছেলে মায়ের কথা মতো কাজ করে। মায়ের পছন্দ ছাড়া বিয়ে করবে না বা সব সিদ্ধান্তে মাকে শামিল করে তারা। তার প্রেমিক তার পরিবর্তে মায়ের কথা মতো কাজ করছে! এই সত্যটি তারা ঠিক মেনে নিতে পারেন না। তাই এই আপাত ভালো ছেলেটিকে তাঁরা mumma’s boy বলে হেয় করতেও ছাড়েন না। এই mumma’s boy-রা তাদের অপছন্দের তালিকায় থাকেন।
৫. প্রথমেই সিরিয়াস হয়ে যায়:
‘আলাপের পর প্রথম ডেটিংয়ে এসেই আমার ওপর অধিকার ফলানো!’ নিজের স্বপ্নের মেয়ের খোঁজ পাওয়ার পরই ভালো ছেলেরা তাদের নিয়ে খুব সিরিয়াস এবং পজেসিভ হয়ে পড়ে। তাঁর যত্ন নিতে গিয়ে অনেক সময় ছেলেরা অধিকার ফলাতে শুরু করে। ফলে সম্পর্ক শুরু আগেই সেখানে ফুলস্টপ লাগিয়ে দেয় মেয়েটি।
৬. প্রচণ্ড আবেগী হয়:
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভালো ছেলেরা প্রচণ্ড আবেগী ও স্পর্শকাতর। আবার কথায় কথায় আবেগের বন্যায় ভেসে যায়– এমন ছেলেদের থেকে মেয়েরা তফাত্ বজায় রাখেন।
ভালো ছেলেরা শেষ পর্যন্ত বুঝে উঠতে পারে না তার প্রেমিকাকে কী বলবে বা কী বলবে না। কিন্তু বিগড়ে যাওয়া ছেলেরা ভালোভাবেই জানে, কী বললে মেয়েটিকে খুশি করা যাবে। আবার মেয়েদের ধারণা, ভালো ছেলেরা ভালো রমাঞ্চকরসঙ্গী হতে পারে না।
চিরকাল ধরে ছেলেরাই মেয়েদের নিরাপত্তা দিয়ে এসেছে। তা সে যে কোনও ধরনেরই নিরাপত্তা হোক না-কেন। বিগড়ে যাওয়া বা হিরো সেজে ঘুরে বেড়ানো ছেলেরা মেয়েদের আশ্বস্ত করে যে, তাদের সম্পূর্ণ নিরাপদে রাখবে। কিন্তু ভালো ছেলেদের সাধারণত দুর্বল মনে করে মেয়েরা, তাই এ ব্যাপারে তাদের ওপর ঠিক ভরসা রাখতে পারে না।
জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। ছেলেরা ভালো এবং খারাপের তালিকায় ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু আদর্শ ছেলেদের উচিত এই দুইয়ের মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখা।
সম্পর্কে যেমন রয়েছে প্রগাঢ় ভালোবাসার অনুভব, তেমনি রয়েছে তিক্ততা। সম্পর্কের এসব জটিল রসায়ন মেনে নিয়েই মানুষ মিলনে আছে, আছে বিচ্ছেদেও। এমন নারী-পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে মুখরোচক গল্পের অভাব নেই। নারীর কথাই ধরা যাক। বলা হয়, দেবতা নারীর মন বোঝেনি! আর আমাদের সামনে যদি এ প্রশ্ন হাজির হয়, মেয়েরা কেন স্বামীর সঙ্গে প্রতারণা করে?
যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এলিসিয়া ওয়াকার নারীর গোপন সম্পর্ক নিয়ে একটি বই লিখেছেন। তিনি তথ্য-প্রমাণ হাজির করে জানিয়েছেন, যেসব নারী স্বামীকে ভালোবাসেন আর বিবাহিত সম্পর্কও অটুট রাখতে চান, তাঁরাই বেশিরভাগ স্বামীর সঙ্গে প্রতারণা করেন। বইটির নাম ‘প্রতারক স্ত্রীর গোপন জীবন’ রেখেছেন এ শিক্ষক-গবেষক।
এক বছর ধরে ওয়াকার ২৪ থেকে ৬৫ বছর বয়সী ৫০ জন নারীর সাক্ষাৎ নেন। একটি ম্যারিড ডেটিং সাইটের ওপর গবেষণার অনুরোধ এলে তিনি বিভিন্ন নারীর সঙ্গে কথা বলেন। দেখেন, যেসব নারী স্বামীর সঙ্গে প্রতারণা করেন, তাঁরা বিবাহ নামক সম্পত্তিটি হাতছাড়া করতে চান না, তারা শুধু যৌনতা ও পুলক খোঁজেন অন্যের কাছে!
অধ্যাপক ওয়াকার তার গবেষণা সম্পর্কে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দি সানকে বলেন, অর্ধেকের বেশি নারী তাকে বলেছেন, তারা যৌনতাবিহীন বিবাহ সম্পর্কে আছেন অথবা তারা পুলকবোধ করেন না এবং সেজন্যই স্বামীর সঙ্গে এ অবিশ্বস্ততা।
ওয়াকারের আগ্রহ ছিল এ বিষয়টার ওপর : কেন মেয়েরা স্বামীর সঙ্গে প্রতারণা করেন? সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তিনি জানতে পারেন, বয়স চল্লিশের আগেই মূলত বেশিরভাগ নারী অবিশ্বস্ত হন।
যারা স্বামীকে ভালোবাসি বলেন, অথচ তার সঙ্গে প্রতারণা করেন; তাদের মনোজগৎ উন্মুক্ত করতেই ওয়াকার গবেষণা করেন। দেখেন, ওই বয়সে তারা নতুন সঙ্গী খুঁজতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন, আর তাই গোপন প্রণয় সারেন। তিনি দেখেন, বেশিরভাগ নারীর কাছে এ আচরণ স্বতঃস্ফূর্ত পছন্দ নয়, এক ধরনের প্রয়োজনীয়তা।
গবেষণায় অংশ নেওয়া নারীদের মধ্যে প্রায় সবাই বলেছেন, ‘আমি অনেক বছর বিবাহিত সম্পর্কে আছি, তাই, হয় আমাকে প্রতারণার মাধ্যমে অন্য কারো কাছ থেকে পুলক নিতে হবে, নয়তো আমাকে স্বামী ছাড়তে হবে।’
এলিসিয়া ওয়াকার বলেন, এটা খুবই হিসাবী সিদ্ধান্ত, যা তারা বৈবাহিক জীবন থেকে হারিয়ে ফেলেছেন, চরম পুলক তার মধ্যে একটি; এবং তারা সত্যিই বিবাহিত অবস্থায় প্রতারণা করছেন, যা বিস্ময়কর।
গবেষণায় অংশ নেওয়া নারীদের একজন ৪৫ বছর বয়সী গ্যাব্রিয়েল। তিনি তার বিবাহিত জীবনের বেদনাদায়ক অধ্যায়গুলো জানান অধ্যাপক ওয়াকারকে। বলেন, ‘আমি হাঁটুতে মুখ লুকিয়ে অনেক কেদেছি। পরে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হয় প্রতারণা করব, নয় পালাব।’
অনেক নারীই বলেছেন, অসুস্থতার কারণে তাদের স্বামী শারীরিকভাবে অক্ষম। কিন্তু তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করা জরুরি এবং তারা তাদের বিবাহিত জীবনও ধ্বংস করতে চান না। আর এ জন্য তারা প্রতারণাকে খারাপভাবে দেখছেন না। তবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেকে আছেন, যারা যেকোনো সম্পর্কে থেকেই প্রতারণা করেন। নতুনত্ব সন্ধানী তাঁরা।
তবে দুজনের সম্পর্ক যে শুধু শারীরিক তা মানতে নারাজ কেউ কেউ। তাঁরা বিবাহিত সম্পর্ক ছেড়ে দিয়ে অন্য সঙ্গী খুঁজতে আগ্রহী। দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকার ফলে যুগলের ভেতর ভালোবাসা সৃষ্টি হয়, এর মূল্যও অনেক। তাই ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে প্রতারণা করতে চান না তারা।
তবে এটা বিস্ময়কর, বেশিরভাগ নারীর সঙ্গে কথা বলে অধ্যাপক ওয়াকার এ সিদ্ধান্তে এসেছেন, পুলক-প্রয়োজনীয়তাই তাদের ‘ভালো স্ত্রী’ ও ‘ভালো মা’ করে তুলছে। আর সবচেয়ে যেটার দিকে মনোযোগ দিতে হবে, তা বৈবাহিক সম্পর্ক রক্ষাও করছে!