পলিথিন ও তালপাতার বেড়া ও ছাউনী দেয়া ছোট কুঁড়ে ঘরে নয় বছরের রুবিনার সংসার। এই ঘরে শুয়ে শুয়ে তালপাতার ছাউনির ফাঁকা দিয়ে দেখা যায় চাঁদের আলো। বিদ্যুতের আলো নেই, তাই অমাবস্যার মতো ঘোর অন্ধকার তার নিত্য সঙ্গী। বর্ষায় বৃষ্টির প্রথম ফোঁটায় প্রতিরাতেই বৃষ্টিস্লাত হয় সে। স্যাঁতসেতে মাটির ঘরে পলিথিন বিছিয়ে ছেড়া কাপড়,কাঁথা বিছিয়ে শিকলব ন্দী মাকেবুকে আগলে তার রাত কাটলেও দিনের যুদ্ধ শুরু হয় ফজরের আজানের পর। রুবিনা রুবির সংসারে মা নসিক ভারসাম্যহীন শিকলব ন্দী মা, মা নসিক ভারসাম্যহীন খালা ও সত্তোরোর্ধ নানী। তাদের পুরো দায়িত্ব তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রীর রুবিনার ছোট্ট কাঁধে। রুবিনার স্বপ্ন একটি ঘরের।
মায়ের উন্নত চিকিৎসা করানোর। কিন্তু রুবিনার সব স্বপ্নই সাদা মেঘের মতো উড়ো যায় দূর আকাশে।পটুয়াখালীর কলাপাড়া সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে নীলগঞ্জ ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামে এই রুবিনার বসত ঘর। ভিটে মাটিহীন রুবিনার ঠাঁই হয়েছে এখন এ গ্রামের জনৈক শহিদের পরিত্যক্ত উঠানে দশ ফুট বাই পাঁচ ফুট একটি ছোট ঝুপড়িতে। দূর থেকে তা গোয়াল ঘর মনে হলেও এই ঘরেই রুবিনার পরিবারের বসবাস। সাত বছর ধরে শিকলব ন্দী মা নসিক ভারসাম্যহীন মা ডলি বেগম। সত্তোরোর্ধ বৃদ্ধা নানী আছিয়া বেগম ও পঞ্চাশোর্ধ মানসিক ভারসাম্যহীন খালা ফাতেমা। এ নিয়েই রুবিনা সংসার।ভোরের আলো ফুটতেই মাকে গাছের সাথে শি কলে বেঁ ধে, খালাকে ঘরে আটকে বৃদ্ধা নানীকে সঙ্গে নিয়ে কখনও এ গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে দু’মুঠো ভাতের জন্য, কখনও মা-খালার চিকিৎসার টাকা জোগাড়ের জন্য। রুবিনার জন্মের আগেই তার বাবা নিরুদ্দেশ। শীতের কুয়াশার মত তার ভবিষ্যৎ ধোঁয়াশা হলেও পিতার আদর স্নেহ থেকে বঞ্চিত রুবিনাকেই সামলাতে হচ্ছে তার পরিবারকে।
টুঙ্গিবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রুবিনার ছোট্ট হাতে থাকার কথা ছিল বই খাতা, খেলনা। অবসরে সমবয়সীদের সাথে ছোটাছুটি করার কথা ছিলো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতায় তাঁকে রান্না থেকে শুরু করে গৃহস্থলীর সকল কাজ করতে হচ্ছে। তারপরও ক রোনা পরিস্থিতির কারনে অবসর পেলেই বই খাতা নিয়ে বসে পড়ে ঘরের দুয়ারে। যখন মা বাঁধা থাকে পাশে গাছের সাথে শি কলে।রুবিনা জানায়, মাকে খাওয়া থেকে গোসল, ঘুম পাড়ানো সবই করতে হয় পা শি কল দিয়ে বেঁধে রেখে। দিনের কোন একসময় যখন খাদ্যের জন্য এ পাড়া থেতে অন্য পাড়ায় যেতে হয় তখন মাকে ঘরে শি কল দিয়ে বেঁধে দড়জা বন্ধ করে যেতে হয়। তার ইচ্ছা মায়ের চিকিৎসা করানো। মায়ের জন্য একটি ঘর করা। কিন্তু যেখানে দু’মুঠো ভাতের জন্য সংগ্রাম করতে হয় সেখানে চিকিৎসা করাবে কীভাবে।অন্যের ঘরে টিভিতে দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী অনেকে গরীবদের ঘর দিয়েছেন, চিকিৎসা করাচ্ছেন। কিন্তু তাদের ভাগ্যে কি প্রধানমন্ত্রীর আদর নেই। তার আর্তি-মায়ের জন্য সে সব কিছু করতে পারে। মা ছাড়াতো তার কেউ নেই। তাইতো এই বয়সে কাঁধে তুলে নিয়েছে পরিবারের ভার।এ ব্যাপারে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, রুবিনার পরিবারের দুঃখ কষ্টের কথা তারা জানতেন না। রুবিনার পরিবারকে আপাতত কিছু খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তাদের থাকার জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করবেন। রুবিনার যাতে শিক্ষাজীবন ব্যহত না হয় এজন্য তাকে শিক্ষা বৃত্তিও দেয়া হবে।